‘সরকারের উন্নয়নের প্রচার সুশীল সমাজের দায়িত্ব নয়’

সরকারের উন্নয়নের প্রচার নয়, সমালোচনা করাই সুশীল সমাজের দায়িত্ব বলে মন্তব্য করেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান। সুশীল সমাজ চাপে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে সরকারের কাছে সুশীল সমাজ
বিতর্কিত। সুশীল সমাজের কাজ হলো সরকারের ভুল-ত্রুটিগুলো মানুষের সামনে তুলে ধরা। সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের প্রচার করা নয়। গতকাল দুপুরে রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে ব্র্যাক কমিউনিটি এমপওয়ারমেন্ট প্রোগ্রাম এবং দি হাঙ্গার প্রজেক্ট যৌথভাবে আয়োজিত ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) স্থানীয়করণ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। সভাপতির বক্তব্যে আকবর আলি খান বলেন, এমডিজি বাস্তবায়ন সম্পর্কে যা শোনা যাচ্ছে তার বিপরীতটাও সত্য। আমরা অনেক ক্ষেত্রে উন্নয়ন করতে পেরেছি সত্য। কিন্তু এর চেয়ে বেশি কিছু এখনও বাকি রয়ে গেছে। এমডিজির উন্নত রূপ এসডিজি বাস্তবায়ন কর্মপরিকল্পনায় স্থানীয় সরকারের অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরার পাশাপাশি কিছু বিপত্তির কথাও উল্লেখ করেন তিনি। আকবর আলি খান বলেন, এসডিজির পরিকল্পনাগুলো সফলভাবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আগে স্থানীয় সরকারগুলোকে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রভাব থেকে বেরিয়ে সঠিক বৈশিষ্ট্য ধারণ করতে হবে। বাস্তবে আমাদের দেশে কোনো স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা  নেই। কারণ, স্থানীয় সরকার কখনও কেন্দ্রীয় সরকারের অংশ হতে পারে না। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রভাবাধীন হতে পারে না। কিন্তু বাস্তবে তো আমরা তা-ই দেখতে পাচ্ছি। উপজেলা পরিষদ এখনও এমপিদের পরামর্শ চলে। ইউপিগুলো কেন্দ্রীয় সরকারের বেতনে চলে, তাদের টুকিটাকি কাজ বাস্তবায়নই তাদের অন্যতম ব্যস্ততা। সরকারের প্রভাব বলয় থেকে বেরুতে না পারলে স্থানীয় সরকার কাজ করতে পারবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, স্থানীয় সরকারের প্রধান সমস্যা হলো বাল্যবিবাহ। এছাড়া শিক্ষা, দারিদ্র্য ও কর্মসংস্থানের সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান করতে হলে সরকার ও এনজিওগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। বৈঠকের শুরুতে আলোচনায় মূল বিষয় তুলে ধরেন দ্য হাঙ্গার প্রজেক্টের গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড কান্ট্রি ডিরেক্টর বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, সুশীল সমাজ, উন্নয়ন সহযোগী ও স্থানীয় সরকারের সমন্বয়ে সরকার এই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার বাস্তবায়ন ঘটাবে। এমডিজি ছিল উন্নয়নশীল ও স্বপ্লোন্নত দেশগুলোর জন্য পরিকল্পনা। আর এসডিজির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই পরিকল্পনায় কেউ বাদ পড়েনি। উন্নত, উন্নয়নশীল, স্বল্পোন্নতসহ পৃথিবীর সব দেশের জন্য উপযোগী করে এই পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এসডিজির পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, আগের আট দফার পরিবর্তে এখন ১৭টি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে, যার আলোকে উন্নয়ন কাজ হবে। এর মধ্যে ১ থেকে ৭ নম্বর সাধারণ মানুষের জন্য, ৮ থেকে ১১ নম্বর অর্থনীতি বিষয়ক, ১২ থেকে ১৫ নম্বর পৃথিবী ও পরিবেশ বিষয়ক, ১৬ নম্বরে রয়েছে সমাজ বিষয়ক পরিকল্পনা এবং সর্বশেষ ১৭ নম্বরে রয়েছে অংশীদারিত্ব বিষয়ক পরিকল্পনা। এসব দফার অধীনে আছে ১৬৯টি ধারা। তিনি আরও বলেন, ২০০০ সালে জাতিসংঘ প্রণীত সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি মাসে। আগামী জানুয়ারি থেকেই শুরু হবে আরও বৃহৎ পরিসরে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) কর্মপরিকল্পনা; যার মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত। বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এমডিজির কিছু পরিকল্পনা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। এসডিজি নিয়ে কথা বলার আগে অবশ্যই সেই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। আবার সবকিছু স্থানীয় সরকারের ওপর চাপিয়ে দিয়ে বসে থাকলে চলবে না। কেন্দ্রীয় সরকারেরও বড় দায়িত্ব রয়েছে এতে। এমপিদের প্রভাব সর্বত্র। তারা সব জায়গায় ভাগ বসায়। তাদের জাতীয় সংসদে ফিরিয়ে আনতে হবে। অংশীদারিত্বমূলক উন্নয়নের জন্য স্থানীয় সরকারকে আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন বলে জানান। ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি রবার্ট ওয়াটকিন্স বলেন, এসডিজির পরিকল্পনাগুলো সত্যিই জটিল ও বিশাল। তবে কঠোর পরিশ্রম করতে পারলে এর বাস্তবায়ন সম্ভব। সফল বাস্তবায়নে সবার আগে প্রয়োজন স্থানীয় সরকার ও কেন্দ্রের সমন্বয়। কিছুদিন আগে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে এক কর্মশালায় আমরা বিষয়গুলো বলেছি। সিভিল সোসাইটির কাজ করার ক্ষেত্রে এটা একটি বড় সুযোগ। তারা ওয়াচডগের ভূমিকার পালন করবে। তাদের অংশীদারিত্ব মনিটরিংকে আরও জোরদার করবে। গোলটেবিল আলোচনায় আরও অংশ নেন কয়েকজন স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি এবং বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা।