গৃহকর্মীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ১৬ সপ্তাহ, শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন

মহিলা ও পুরুষ গৃহকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে একটি নীতিমালা অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণনীতি’র মাধ্যমে দেশের প্রায় ২৫ লাখেরও বেশি গৃহশ্রমিক তাদের কাজের জন্য সরকারি স্বীকৃতি পাবেন। একই সঙ্গে স্ব-বেতনে চার মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি ছাড়াও অন্য ছুটি ভোগ করতে পারবেন গৃহকর্মীরা। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে অনুমোদিত ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণনীতি, ২০১৫’-এ বলা হয়েছে, প্রত্যেক মাসের ৭ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ, চাকরি অপসারণের ক্ষেত্রে এক মাস আগে না জানালে ৩০ দিনে মজুরি প্রদান, নারী গৃহকর্মীর মাতৃত্বকালীন সময়ে স্ব-বেতন ১৬ সপ্তাহ ছুটি এবং কর্মক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণসহ শ্রম আইন অনুযায়ী সুবিধা পাবেন গৃহকর্মীরা। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, এ নীতিমালা অনুমোদন পাওয়ায় শ্রম আইন অনুযায়ী গৃহকর্মীরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাবেন। সর্বনিম্ন ১৪ বছরের কাউকে গৃহকর্মী নিয়োগ দেয়া যাবে। তবে ১২ বছর বয়সের কাউকে গৃহকর্মী রাখতে হলে তার আইনানুগ অভিভাবকের সঙ্গে তৃতীয় কোনো পক্ষের উপস্থিতিতে নিয়োগকারীকে আলোচনা করতে হবে। গৃহকর্মীদের শ্রম ঘণ্টা এবং বেতন আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করতে হবে। এ নীতিমালা অনুমোদনের ফলে গৃহকর্ম শ্রম হিসেবে স্বীকৃত পাবে এবং চার মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি পাবেন গৃহকর্মীরা। নীতিমালায় গৃহকর্মীদের বিশ্রামের পাশাপাশি বিনোদনের সময় দেয়ারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গৃহকর্মী নির্যাতনের বহু অভিযোগের প্রেক্ষাপটে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নির্যাতন করলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী সরকার ব্যবস্থা নেবে। তবে, গৃহকর্মীদের সুনির্দিষ্ট বেতন কাঠামো নিয়ে কোনো কথা এ খসড়া নীতিমালায় নেই। এ ক্ষেত্রে গৃহকর্মী ও নিয়োগকর্তা পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে আলোচনা সাপেক্ষে বেতন নির্ধারণ করবেন। একই সঙ্গে শ্রম ঘণ্টার বিষয়টিও নিয়োগকর্তা এবং গৃহকর্মী আলোচনা সাপেক্ষে ঠিক করবেন। নীতিমালায় সাপ্তাহিক বা মাসিক ছুটির কথাও উল্লেখ করা হয়নি। দেশে কতজন গৃহকর্মী আছেন তার কোনো হিসাব সরকারের কাছে নেই। কিন্তু, এ নীতিমালা অনুযায়ী গৃহকর্মীদের জন্য আলাদা তথ্যভাণ্ডার গড়ে তুলবে সরকার। গৃহশ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা ‘গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্ক’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের তথ্য মতে, বাংলাদেশে ২০ লাখের বেশি গৃহশ্রমিক রয়েছেন। অনুমোদিত নীতিতে গৃহকর্মীর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, গৃহকর্মী বলতে এমন কোনো ব্যক্তিকে বোঝাবে যিনি নিয়োগকারীর গৃহে মৌখিক বা লিখিতভাবে খণ্ডকালীন বা পূর্ণকালীন নিয়োগের ভিত্তিতে গৃহকর্ম সম্পাদন করেন। এ ক্ষেত্রে মেস বা ডরমিটরিও গৃহ হিসেবে বিবেচিত হবে। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, গৃহকর্মী নীতিমালা সময়ের দাবি ছিল। নীতিমালাটি মন্ত্রিসভার অনুমোদন পাওয়ায় ভালো লাগছে। এ সরকার দেশের সব মানুষের কথা চিন্তা করে। এটা শুধু কথার কথা নয়, কাজ করেই আমরা প্রমাণ করছি।গৃহকর্মীদের সুবিধা: অনুমোদিত নীতি অনুযায়ী গৃহকর্মীদের জন্য শোভন কাজ ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা, বিশ্রাম, বিনোদন এবং ছুটির অধিকার দান, একজন শ্রমিক হিসেবে যা যা দরকার একজন গৃহকর্মীকে তার সব সুবিধা দিতে হবে নিয়োগকর্তাকে। মহিলা গৃহকর্মীরা মাতৃত্বকালীন সময়ে প্রসবের আগে চার সপ্তাহ এবং পরে ১২ সপ্তাহ মিলিয়ে মোট ১৬ সপ্তাহ স্ব-বেতনে ছুটি কাটাতে পারবেন। ১২ বছর বয়সীদের আইনানুগ অভিভাবকের সঙ্গে আলোচনাক্রমে গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োগ করা যাবে। তবে, ১৮ বছরের আগ পর্যন্ত তাদের হালকা কাজের দায়িত্ব দিতে হবে। গৃহকর্মীদের কর্মঘণ্টা বিন্যাসে পর্যাপ্ত ঘুম, বিশ্রাম, চিত্তবিনোদন এবং প্রয়োজনীয় ছুটির ব্যবস্থা রাখতে হবে। অসুস্থ গৃহকর্মীকে নিয়োগকর্তা নিজের দায়িত্বে চিকিৎসা করাবেন। গৃহকর্মী ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করবে এবং কর্মক্ষেত্রে গৃহকর্মীর কোনো ক্ষতি হলে তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে মালিককে।