আড়াইহাজারে দখলে লোপাটে অপ্রতিদ্বন্দ্বী এমপি বাবু

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে সংসদ সদস্য (এমপি) নজরুল ইসলাম বাবুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে অর্থ লোপাট, স্থানীয় লোকজনের বাড়ি ও জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। এসব কাজে তিনি সামনে রাখছেন তার কাছের লোক হিসেবে পরিচিত উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজালাল এবং ইউপি চেয়ারম্যান লাট মিয়াকে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এলাকার উন্নয়নমূলক প্রতিটি কাজই এখন নিয়ন্ত্রণ করছেন সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু ও তার লোকজন। বাইরের কেউ এসব কাজের প্রতিবাদ তো করতে পারেনই না, আওয়ামী লীগের কারোরও করার সুযোগ নেই। এই সংসদ সদস্য নিজের পছন্দের লোকদের নিয়ে গড়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনগুলোকে। সেই লোকদের মাধ্যমে নামে-বেনামে লোপাট করছেন কোটি কোটি টাকা।আড়াইহাজার উপজেলার বিশনন্দি এলাকায় মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষে প্রায় দেড়শ’ বিঘা জমি নিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে পুষ্টিবিজ্ঞান গবেষণা ইন্সটিটিউট। প্রতিষ্ঠানটি স্থাপন করার জন্য এলাকাবাসীর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জমি ভরাটের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। জানা গেছে, জমি ২৯ ফুট গভীর দেখিয়ে ভরাটের প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ২৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে জমিটির গড়ে ৩ ফুট গভীরতা ভরাট করতে হয়েছে।প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করার সঙ্গে জড়িত সড়ক ও জনপথ বিভাগের এক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এ প্রকল্পে বালু দিয়ে গড়ে তিন ফুট উচ্চতায় জমি ভরাট করা হয়। যার প্রকৃত খরচ সর্বোচ্চ ৬ কোটি টাকা। সংসদ সদস্য বাবু প্রভাব বিস্তার করে জমির গভীরতা ২৯ ফুট দেখিয়ে প্রায় ৩০ কোটি টাকার খরচ নির্ধারণ করানো হয়েছে। যে ঠিকাদারকে কাজ দেয়া হয়েছে সংসদ সদস্যের সঙ্গে তার যোগসাজশ রয়েছে। ইতিমধ্যে জমি ভরাটের প্রায় ৯০ ভাগ বিল উত্তোলন করা হয়েছে।স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, সংসদ সদস্য বাবুর নির্দেশে গ্রামবাসীর প্রতিরোধ সত্ত্বেও তারা অনেকটা জোর করে এলাকাবাসীর জমি অধিগ্রহণ ও ভরাটের কাজে সহযোগিতা করেছেন। কথা ছিল ঠিকাদারের লাভের একটি অংশ থেকে তাদের ভাগ দেয়া হবে। কিন্তু কাজ শেষ করার এক বছর পরও তারা লাভের কোনো টাকা পাননি। তবে ঠিকাদার ৬ কোটি টাকার কাজ করার পর তাকে এক কোটি টাকা লাভ দেয়া হয়েছে। বাকি টাকা সংসদ সদস্য বাবুর কাছে জমা আছে।এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু যুগান্তরকে বলেন, ৩০ কোটি টাকা প্রকল্প ব্যয় ধরে দু’বার টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এলজিইডি টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করেছে। স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজালাল এ কাজের জন্য টেন্ডার দাখিল করলেও ঢাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০ ভাগ কমে ২৭ কোটি টাকার টেন্ডার দিয়ে কাজ করার অনুমোদন পেয়েছেন। ভরাট কাজটি তদারকিতে ছিল কৃষি মন্ত্রণালয় ও এলজিইডি। সেখানে কত টাকার বিল পরিশোধ করা হয়েছে সেটি আমি জানি না। এখানে ছাত্রলীগ কিংবা যুবলীগের নেতাদের কোনো লাভের অংশ দেয়ার সুযোগ নেই।আড়াইহাজারে চিরকুমার স্কুলশিক্ষক সুকুমার রায় মারা যাওয়ার পর নজরুল ইসলাম বাবুর লোকজন ৮ বিঘা জমির ওপর তার (সুকুমার) বাড়িটি ভুয়া দলিল করে নিজেদের নামে নিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, সংসদ সদস্য বাবু নেপথ্যে থেকে এ কাজ করিয়েছেন। তবে সংসদ সদস্য বাবু যুগান্তরকে বলেন, এটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সহকারী কমিশনারের (ভূমি) দায়িত্ব। আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। বিষয়টি আমি তদন্ত করে দেখব।আড়াইহাজারে দুটি পৌরসভার বাইরে ১০টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নের উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য কাবিখা এবং টিআরের মাধ্যমে গম বরাদ্দ দেয়া হয়। এ বরাদ্দ কমিটির সমন্বয়ক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজালালকে করা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন চেয়ারম্যান জানান, এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর ইচ্ছে অনুযায়ী শাহজালালকে কাবিখা ও টিআর বরাদ্দ কমিটির চেয়ারম্যান করার পর সেখানে একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। প্রতি টন গম বাইরে বিক্রি করলে ২৬ হাজার টাকা পাওয়া যায়। অথচ তাদের কাছে ডিও ১২ হাজার টাকা টন হিসেবে বিক্রি করে দিতে হয়। এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য বাবুর কাছে অভিযোগ করে কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।সংসদ সদস্য বাবু কাবিখা কিংবা টিআর বরাদ্দের বিষয়ে তার সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করে বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখব। এ ধরনের কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেব।এসব ছাড়াও সংসদ সদস্য বাবুর বিষয়ে মুকুন্দি ব্রিকফিল্ডের ৬০ বিঘা জমি এবং সৎমান্দি গ্রামের রহম আলীর ৮০ কোটি টাকা মূল্যের ২৭ বিঘা জমি মাত্র ২৫ লাখ টাকায় রেজিস্ট্রি করে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম বাবু বলেন, আমার জনপ্রিয়তা এবং উন্নয়ন কমকাণ্ডে ভীত হয়ে একটি চক্র অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি ২৪ ঘণ্টা এলাকার মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করি। আমি অন্য কারোর মতো রাজনীতি করি না। যেহেতু আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই সেজন্য কোনো অপপ্রচার করে লাভ হবে না।