বিদেশী মিডিয়ায় বাংলাদেশের ‘অন্ধকারের’ খবর

বাংলাদেশের স্মরণকালে ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের খবর প্রচার হয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ গুরুত্বপূর্ণ সব গণমাধ্যমে উঠে আসে এ খবর। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবদেনে বলা হয়, বিদ্যুৎ সংযোগ কখন ফিরতে পারে সে ব্যাপারে মিশ্র ইঙ্গিত দিচ্ছেন বাংলাদেশী কর্মকর্তারা। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নাসরুল হামিদ বিপু বলেন, গতকাল দিনের শেষে বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হবে। কিন্তু বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের একজন পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করার চেষ্টা বার বার ব্যর্থ হচ্ছে। বিদ্যুৎ কখন ফিরবে সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন। রয়টার্সকে তিনি বলেন, ৫০০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন কমে দাঁড়িয়েছে ৪০০ মেগাওয়াটে। এদিকে ভারতের বিদ্যুৎ গ্রিড কর্পোরেশনের হেড অব অপারেশন আর. পি শাসমল বলেন, তাদের দিকে কোন সমস্য নেই। ‘তিনি বলেন, আমাদের লাইন ঠিক আছে। সরবরাহ লাইন আছে দু’টি। একটি লাইনে এখনও সংযোগ রয়েছে। আর আরেকটি লাইনে বাংলাদেশ উপকেন্দ্র থেকে আমরা ‘ট্রিপ কমান্ড’ পেয়েছি। এটা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই হয়, এটা নিরাপত্তা ব্যবস্থাগুলোর একটি।’ রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ গ্রিড প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুম আল বেরুনি বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, কারিগরি ত্রুটির কারণে সৃষ্টি হয় ওই ব্ল্যাকআউট। কিন্তু তিনি কারণ ব্যাখ্যা করেননি। শক্তিশালী জেনারেটর ব্যবহার করে দেশের কয়েকটি স্থানে বিদ্যুৎ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়। গতকাল সন্ধ্যার মধ্যে রাজধানী ঢাকায় বিদ্যুৎ ফিরিয়ে আনার বিষয়ে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি জানান- দেশের কয়েকটি স্থানে বিদ্যুৎ চালু হয়েছে। তবে দেশের কোন কোন স্থানে তা বিস্তারিত বলেননি। তিনি বলেন, ঢাকাতে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সকল উপকেন্দ্রগুলো চালু করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব শহরে বিদ্যুৎ ফিরবে। ঢাকার হাসপাতালগুলো ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর জরুরি জেনারেটরের সাহায্যে তাদের কর্মকা- পরিচালনা করে। বেরুনির এক সহযোগী জানান, কারিগরি কর্মীরা ভারতের সঙ্গে সংযোগ লাইন নতুন করে চালু করারও চেষ্টা করছেন। মীর মোতাহার হোসেন বলেন, আমাদের কাজ দ্রুত এগোচ্ছে। সব জায়গাতে না হলেও বেশির ভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ চালু করার বিষয়ে আমরা আশাবাদী। গত বছর অক্টোবর মাস থেকে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু করে বাংলাদেশ। গতকালের এ বিরাট বিপর্যয়ের প্রকৃত কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে বাংলাদেশ জাতীয় গ্রিডের প্রধান চৌধুরী আলমগীর হোসেইন বলেছেন, ভারত থেকে আসা বিদ্যুৎ সরবরাহকারী একটি সাবস্টেশনে কারিগরি ত্রুটির কারণে এ বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটে। আর একারণেই একের পর এক বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়ে দেশের অন্যান্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র। উচ্চ ভোল্টেজের বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনটি পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর থেকে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা কুষ্টিয়ার ভেরামারা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সংযোগ স্থাপন করেছে। ভারত ছাড়াও বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণে বাংলাদেশ জাপান, চীন, মালয়েশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। বাংলাদেশের সাড়ে ষোল কোটির অধিক জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ মানুষই বিদ্যুৎ সংযোগের বাইরে। বাংলাদেশে লোডশেডিং সাধারণ একটি ব্যাপার। তারপরও বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়ার পেছনে রয়েছে অকার্যকর গ্রিড অবকাঠামো আর দুর্বল ব্যবস্থাপনা। গতকালের দেশব্যাপী ব্যাপক বিদ্যুৎ বিপর্যয় ২০০৭ এর পর সব থেকে বড় বিপর্যয়। সেবার শক্তিশালী সাইক্লোনের আঘাতে কয়েক ঘণ্টা বিকল ছিল জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিড।