বাংলাদেশিদের জন্য ওমরাহ ভিসা উন্মুক্ত

অবশেষে বাংলাদেশিদের জন্য ওমরাহ ভিসা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি আরব। ওমরাহর নামে মানব পাচারের অভিযোগে নয় মাস ধরে বন্ধ ছিল এই ভিসা। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হুসাইন। এর আগে ১৪ই ডিসেম্বর সৌদি কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এক চিঠিতে ওমরাহ ভিসা চালু করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। আনোয়ার হুসাইন সাংবাদিকদের জানান, আগামী বছরের ওমরাহ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ইতিমধ্যে প্রাথমিকভাবে ৭০টি হজ এজেন্সির তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশের তিন শ’ হজ এজেন্সি থাকলেও ২০৪টির বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ রয়েছে। যেসব এজেন্সির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই তাদের ওমরাহ কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে মানব পাচারের অভিযোগে ৯৫টি এজেন্সিকে শাস্তি দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ৬৯টি এজেন্সির লাইসেন্স বাতিলসহ জরিমানা ও জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ২৬টি এজেন্সিকে আর্থিক জরিমানা এবং ৯টি এজেন্সির অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শাস্তিপ্রাপ্ত এজেন্সিগুলোর মধ্যে হাব ও আটাবের বর্তমান এবং সাবেক নেতাদের এজেন্সিও রয়েছে।  এব্যাপারে হাবের সভাপতি ইবরাহিম বাহার বলেন, মন্ত্রণালয়ের তরফে অভিযুক্ত এজেন্সির নাম ঘোষণা করে তাদের চিঠি দেয়া হয়েছে। ৮ই ডিসেম্বর নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে ওই চিঠির যথাযথ জবাবসহ অভিযোগের পুনঃশুনানির আবেদন দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওমরাহর নামে মানবপাচারের অভিযোগে সৌদি সরকার নয় মাস যাবৎ ওমরাহ ভিসা বন্ধ রেখেছে। সরকারি- বেসরকারি পর্যায়ে অনেক চেষ্টা-তদবির করেও ওমরাহ ভিসা চালু করা যাচ্ছিল না। এ পর্যায়ে সরকার অভিযুক্ত এজেন্সিদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগী হয়। তারাই ধারাবাহিকতায় ১০৪টি এজেন্সির নামে তদন্ত করে তাদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেয়। এব্যাপারে গত ১৮ই নভেম্বর ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বলেন, ১০৪টি ওমরাহ এজেন্সির পাঠানো যাত্রীদের মধ্যে ১১ হাজার ৪৮৫ জন ফেরত আসেনি। এসব এজেন্সির অভিযোগ তদন্ত করে ৯৫টি এজেন্সিকে শাস্তি দেয়া হয়েছে। আর ৯টি এজেন্সির অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ওদিকে গত মাসে সৌদি আরবের ওমরাহ ভিসা চালু করতে বাংলাদেশের ৬টি এজেন্সি উদ্যোগী হয়েছে। আর এ উদ্যেগের সহযোগী হয়েছে সৌদি আরবের ওমরাহ  এসোসিয়েশনের সদস্য এবং দেশটির কাছওয়া হজ ও ওমরাহ সার্ভিস নামে একটি প্রতিষ্ঠান। ১৮ই নভেম্বর রাজধানীর একটি হোটেলে ‘কাছওয়া হজ ও ওমরাহ’ সার্ভিসের পরিচালক রিয়াজ মাহমুদের সঙ্গে ওই ৬ এজেন্সির একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী শিগগিরই বাংলাদেশিদের জন্য ওমরাহ নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে এবং ওই ৬টি এজেন্সি পবিত্র ওমরাহ পালনে লোক পাঠাতে শুরু করবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়। দুই পক্ষের এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানে সৌদি আরবের ওমরাহ এসোসিয়েশনের সদস্য কাছওয়া হজ ও ওমরাহ সার্ভিসের পরিচালক রিয়াজ মাহমুদ বলেছিলেন, সৌদি আরব সরকার ওমরাহ ভিসা বন্ধ করেনি। কিছু মানব পাচারকারীর কারণে এটা বন্ধ ছিল। এখন থেকে ওমরাহ ভিসা চালু হবে এবং বাংলাদেশিরা নির্বিঘ্নে ওমরাহ পালন করতে পারবেন। তবে যারা মানবপাচার করেছে তাদের এজেন্সি ওমরাহ পালনে লোক পাঠাতে পারবে না। বাংলাদেশের সরকারও এ ব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।